
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের একটি অংশ বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
বিদ্যালয়গুলোতে সোমবার (১ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষার কোনো কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না তারা।
আবার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরাও চলমান বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের ডাকে সোমবার অনেক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এর মধ্যেও অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন এবং অধিকাংশ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা শুরু হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে, অধিকাংশ সরকারি মাধ্যমিকে বন্ধ রয়েছে পরীক্ষা। কিছু কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।
প্রাথমিকে কোথাও পরীক্ষা চলছে, কোথাও বন্ধ
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে শিক্ষকরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ‘প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ বার্ষিক পরীক্ষার কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। ফলে এ সংগঠনের ডাকে সহকারী শিক্ষকদের একটি পক্ষের অংশগ্রহণে অনেক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলছে।
ঐক্য সংগঠনের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলন করেছি, করবো। কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রাখলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে। সেদিক বিবেচনা করে আমরা পরীক্ষা কার্যক্রমে কোনো বাধা সৃষ্টি বা অসহযোগিতা করছি না।
‘প্রাথমিক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে আরেকটি সংগঠন বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছেন। তাদের সমর্থনকারী অংশের সহকারী শিক্ষকরা কোনো পরীক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না। রংপুর, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, ঢাকার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের ডাকে পরীক্ষা বর্জন চলছে।
প্রাথমিক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মু. মাহবুবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘অসংখ্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা বর্জন চলছে। শিক্ষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিয়ে আমাদের ডাকে পরীক্ষা বর্জন করছেন। তবে কোথাও আমরা বাধা দিচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যারা কর্মবিরতি করছি, যদি আমাদের সহযোগিতা ছাড়া কোনো স্কুল বার্ষিক পরীক্ষা নিতে সক্ষম হয়, সেক্ষেত্রে তারা পরীক্ষা নিতে পারে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ঘোষিত কর্মসূচি পালন করছি। আশা করছি, সরকার আমাদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করবে।’
নোটিশ দিয়ে পরীক্ষা স্থগিত অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে
চার দফা দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও বার্ষিক পরীক্ষা, খাতা দেখাসহ সব কার্যক্রম বর্জন করছেন। এক্ষেত্রে অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয় আগের দিনই নোটিশ দিয়ে পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন।
ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, খুলনার সরকারি করোনেশন গার্লস হাই স্কুল, ঢাকার গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে বার্ষিক পরীক্ষা না নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ডাকে এ বর্জন কর্মসূচি করছেন মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকরা। সমিতির কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের দাবিগুলো পূরণের বিষয়ে রূপরেখাসহ সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিলে তারা শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কর্মবিরতি স্থগিত করে পরীক্ষার কাজে অংশ নেবেন।
মাধ্যমিক শিক্ষকদের চার দাবি
• সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের’ গেজেট প্রকাশ
• বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা
• সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ দেওয়া
• ২০১৫ সালের আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের দুই থেকে তিনটি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন-সুবিধা বহাল করে গেজেট প্রকাশ
উপস্থিতির তথ্য চেয়ে মন্ত্রণালয়ের চিঠি
এদিকে, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান বার্ষিক ও নির্বাচনি পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের আজকের উপস্থিতির তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সোমবার (১ ডিসেম্বর) মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা অফিস আদেশে বিষয়টি জানানো হয়।
সিনিয়র সহকারী সচিব সিফাত উদ্দিনের সই করা আদেশে বলা হয়েছে, সোমবার সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান বার্ষিক বা নির্বাচনি পরীক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের উপস্থিতির তথ্য দুপুর ১২টার মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে পাঠাতে হবে। বিষয়টিকে জরুরি বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়।
আমার বার্তা/এল/এমই

