দীর্ঘ অপেক্ষার পর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকর হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হবে বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়া। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এরপর গাজার বেশ কিছু এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে ইসরায়েল সরকার।
চুক্তির পরবর্তী ধাপ অনুযায়ী, সোমবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে বন্দিবিনিময় সম্পন্ন হবে। ফলে গাজায় আটক থাকা অন্তত ২০ জীবিত ইসরায়েলি বন্দি এবং ২৮ জনের মরদেহ ইসরায়েলে ফেরত পাঠানো হবে। এর বিনিময়ে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল, যাদের মধ্যে ২৫০ জন ইসরায়েলি আদালতে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত।
২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিলেও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী ছয়জন জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাকে মুক্তি দেবে না ইসরায়েল সরকার। এরই মধ্যে বন্দি মুক্তির তালিকা থেকে এই ছয় নেতার নাম বাদ দিয়েছে ইসরায়েলি সরকার। তবে এই ছয় নেতার মুক্তির জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে হামাস।
মারওয়ান বারঘুতি
১৯৫৯ সালে রামাল্লার কোবারা গ্রামে জন্ম নেওয়া বারঘুতি ফিলিস্তিনি রাজনীতির মুখ্য ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। ফিলিস্তিনিদের নিকট নেলসন ম্যান্ডেলা নামে পরিচিত বারঘুতি ২৩ বছর ধরে ইসরায়েলে কারাগারে বন্দি। ২০০২ সালে বারঘুতিকে গ্রেফতার করে ইসরায়েলি বাহিনী। এরপর ২০০৪ সালে পাঁচটি হত্যা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পশ্চিম তীরের রাজনৈতিক সংগঠন ফাতাহের শীর্ষস্থানীয় এ নেতা ২০০০-২০০৫ সালের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
আহমাদ সাদাত
ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (পিএফএলপি) মহাসচিব আহমাদ সাদাতের নাম একাধিকবার বন্দিবিনিময়ের আলোচনায় উঠে এসেছ। ১৯৫৩ সালে রামাল্লার কাছে আল-বিরেহ শহরে জন্ম নেওয়া সাদাত ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে প্রতিষ্ঠিত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী সংগঠন পিএফএলপিতে যোগ দেন।
২০০১ সালে ইসরায়েলি হামলায় তৎকালীন নেতা আবু আলি মুস্তাফা নিহত হওয়ার পর তিনি সংগঠনের নেতৃত্বে আসেন। এর পরপরই পিএফএলপির সশস্ত্র শাখা ইসরায়েলি পর্যটনমন্ত্রী রেহাভাম জেভিকে হত্যা করে প্রতিশোধ নেয়। এ হামলায় পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয় সাদাতের বিরুদ্ধে। ২০০৬ সালে জেরিকো কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ইসরায়েলি বাহিনী তাকে আটক করে। দুই বছর পর তাকে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আবদুল্লাহ বারঘুতি
ইসরায়েলের কারাগারে সবচেয়ে দীর্ঘ সাজাপ্রাপ্ত বন্দি তিনি। ১৯৭২ সালে কুয়েতে জন্ম নেওয়া বারঘুতি হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের অন্যতম শীর্ষ বোমা প্রস্তুতকারক ছিলেন। ২০০৩ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং পরে যাবজ্জীবন ও ৫,২০০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
হাসান সালামেহ
গাজার খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে ১৯৭১ সালে জন্ম নেওয়া সালামেহও আল-কাসাম ব্রিগেডের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।১৯৯৬ সালে তিনি ইসরায়েলে সংঘটিত একাধিক আত্মঘাতী হামলার দায়ে গ্রেফতার হন। ইসরায়েলি আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।
ইব্রাহিম হামেদ
১৯৬৫ সালে রামাল্লার কাছে সিলওয়াদে জন্মগ্রহণকারী হামেদ বর্তমানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় তিনি পশ্চিম তীরে হামাসের সামরিক শাখার প্রধান ছিলেন এবং ইসরায়েল তার বিরুদ্ধে ডজনখানেক হামলার অভিযোগ আনে। ২০০৬ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ২০১২ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আব্বাস আল-সায়েদ
১৯৬৬ সালে পশ্চিম তীরের তুলকারেমে জন্ম নেওয়া আল-সাইয়্যেদ ২০০২ সালে গ্রেপ্তার হন। নেটানিয়ায় পার্ক হোটেল হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে তাকে ১০০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। - সূত্র : মিডল ইস্ট আই
আমার বার্তা/এমই