
সময়ের সাথে সাথে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে ধৈর্য, সহানুভূতি, সহনশীলতার মতো কোমলতা। ছোটখাট তর্ক থেকে বড় বড় দ্বন্দ্ব, সবখানেই দেখা যাচ্ছে অস্থিরতা-অসহিষ্ণুতা।
শহর যেন গতি দিয়ে গড়া এক অবিরাম দৌড়। এখানে ভোর মানেই ক্লান্ত এক শুরু। প্রত্যেক মানুষ যেন ছুটে চলা একেকটি নগর বিষাদ। তাইতো নগরজীবনে ভুল মানেই রাগ, একটু দেরি মানেই অপমানের শিকার হওয়ার ঝুঁকি। একটা শব্দেই পাল্টে যায় সম্পর্ক। কিংবা নীরবতায় সুতায় টান পড়ে বন্ধুত্বে। চারিদিকে অস্থিরতা আর আক্রোশের ছড়াছড়ি। কেউ কি থেমে দেখে পাশের মানুষটা কেমন আছে?
অনেকে বলছেন, ব্যক্তিগত জীবনে যে চাপ, তাতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য মানুষকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়। তাই অন্যের খোঁজ তেমন একটা রাখা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না।
বোঝাপোড়া তো দূরের কথা, কেবল প্রতিক্রিয়া জানতে চায় মানুষ। দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে অনুভবের শক্তি। যেখানে অপেক্ষার চেয়ে চলে যাওয়াই সহজ, সেখানে ভিন্নমত তো বিষাক্ত বিষের পেয়ালা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্যের ঝড়, রাজনৈতিক-ধর্মীয় বিষয়ে উত্তেজিত প্রতিক্রিয়া। এ যেন অসহিষ্ণু সমাজের প্রতিচ্ছবি।
সমাজ বিশ্লেষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, যেভাবে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে, এর পেছনের কারণ হচ্ছে যে ‘আমি যা বুঝি, সেটাই সঠিক’। এর বাইরে আর কোনো কথা নেই। এটা দুইটা কারণে হয়। একটা হচ্ছে যে সমাজে মানুষ লেখাপড়া করে কম। তারা ভাসাভাসা তথ্যের ওপর নির্ভর করে। আবার অনুমান নির্ভর করে কথা বলেন। সেই সমাজেই মানুষ সবচেয়ে বেশি এই অবস্থানে থাকে। এছাড় আরেকটি হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের মানসিকতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। যেসব এলাকা উষ্ণ, সেখানে সমস্যা বেশি।
কেউ ধীরে চললে পিছিয়ে পড়ে। সহনশীল হলে দুর্বল ভাবে। কিন্তু কে জানে, হয়তো ধীরে চলা মানুষটাই এখনও মানুষ আছে!
আগে রাগ মানে ছিল ক্ষণিকের অভিমান, এখন রাগ মানেই সম্পর্কের সমাধি। একটা শব্দই এখন যুদ্ধের কারণ, একটা পোস্টেই বন্ধুত্ব শেষ। ধীরে ধীরে আমরা হারাচ্ছি ধৈর্য শক্তি। সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, ডিজিটাল এই যুগে মানুষ ব্যস্ততাতায় ডুবে যাচ্ছে, সঙ্গে চূড়ান্ত সত্য মনে করছে নিজের মতকে। ফলে সংঘাত বাড়ছে, কমছে সহনশীলতা।
বিশ্বজুড়ে আজ রোববার (১৬ নভেম্বর) পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবস। ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতিবছর এ দিনটি উদ্যাপন হচ্ছে সহনশীলতার মূল্যবোধকে ধারণ ও প্রসারিত করার বিশ্বাসে।
আমার বার্তা/এল/এমই

