মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, শেখ হাসিনা যদি আদৌ বাংলাদেশে আসেন, যদি ধৃষ্টতার চিন্তা করে দেশে ফিরে আসেন, তাহলে তাকে ফিরতে হবে গণহত্যার আসামি হয়ে। গণহত্যার বিচারের জন্য তাকে আগে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতদের স্বাবলম্বীকরণে বিজিবির সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
ফরিদা আখতার বলেন, শেখ হাসিনার মতো একজন ফ্যাসিস্টকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে কোনো রাজনৈতিক দল কোনো আন্দোলনে পারেনি, পেরেছে ছাত্র জনতা। সেই আন্দোলনে ছাত্রের পাশাপাশি যারা আহত নিহত হয়েছে, তাদের কেউ রিকশা চালাতো, কেউ গ্যারেজে কাজ করতো। কেউ বেকার ছিল না। তাদের জীবন ছিল। দেশের কারণে অন্যায় সহ্য করতে না পেরে তারা কিন্তু রাস্তায় নেমেছিল।
তিনি বলেন, আমরা যারা সুস্থ আছি, যারা রাস্তায় ছিলাম, অনেকে ভালো আছি। হাসনাত-সারজিসরা সুস্থ আছে, আল্লাহর শুকরিয়া। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব, দায়বদ্ধতা এখন অনেক বেশি। আমাদের দায়িত্ব শুধু কয়েকটা মন্ত্রণালয় পরিচালনা করা না দেশের প্রতি মানুষের প্রতি এখন যে কোন নির্বাচিত সরকারের চেয়েও বেশি। সরকার তার এজেন্ডা এবং জুরিডিকশনের মধ্যেই অনেক কাজ করে থাকেন। কিন্তু আমরা রক্তের ওপর, আহাজারির ওপর এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিয়েছি। সঙ্গত কারণে আমাদের দায়িত্বও অনেক বেশি। আমরা যদি জুলাই বিপ্লবের জড়িতদের জন্য কিছু করতে না পারি তাহলে আমাদের যে শাস্তি দেবেন মাথা পেতে নেবো।
তিনি বলেন, আমি যখন পিলখানা দিয়ে ঢুকছিলাম তখন গা শিউরে উঠছিল। ওই ঘটনার পর আমার এদিকে আর কখনো আসা হয়নি। এখনো সে সময়ের টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ, ছবি দেখলে গা শিউরে ওঠে। কাঁধের ওপর সৈনিকরা যখন লাশ বহন করছিল কাঁদছিল। সৈনিকদের আমরা কখনো ওভাবে কাঁদতে দেখিনি।
এই সরকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার করবে উল্লেখ করে ফরিদা আখতার বলেন, এখন যারা বিজিবিতে রয়েছেন তাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি আপনারা অবশ্যই বিজিবির পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইবেন। পিলখানা হত্যার বিচার আমরা চাইবোই, এ বিচার হতেই হবে। এই সরকার পিলখানা হত্যার বিচার অবশ্যই করবে।
তিনি বিজিবিকে অনুরোধ করে বলেন, আমার মন্ত্রণালয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ। ইলিশ নিয়ে আমরা অনেক বিপদে থাকি। ভারত আমাদের ইলিশ ছাড়া খাবে না অথচ তাদের গঙ্গায় ইলিশ হয় সেই গঙ্গার ইলিশ আবার স্বাদ নাই। পদ্মার ইলিশ তাদের লাগবে। কাজেই এখান থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে আমাদের ইলিশ ভারতে যায়। বিজিবি অনেকটা বন্ধ করেছে। সামনেও যেন ইলিশ চোরাচালান না হয় সেজন্য নজরদারি বাড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও চিন্তক ফরহাদ মজাহার, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মেজর (অব.) আহমেদ ফেরদৌস, উইমেন সাপোর্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা তৌহিদা হক।
এছাড়া বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, আহত ছাত্র-জনতা ও তাদের অভিভাবক এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
আমার বার্তা/এমই