ই-পেপার সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২

নদীভাঙনের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তহীন লড়াই: রয়টার্সের প্রতিবেদন

আমার বার্তা অনলাইন
১০ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৪৩

মেঘলা এক সকালে নুরুন্নবী বাঁশের খুঁটি ও টিনের শিট তুলছেন কাঠের নৌকায়। মাত্র এক বছর আগে ব্রহ্মপুত্রের বুকে গড়ে তোলা তার ঘরটি এখন নদীতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম। এ নিয়ে মাত্র এক বছরের মধ্যেই দ্বিতীয়বার ঘরবাড়ি গুটিয়ে পালাতে হচ্ছে তাকে।

‘নদী প্রতিদিনই কাছে চলে আসছে,’ ক্লান্ত গলায় বলেন ৫০ বছর বয়সী এই কৃষক। তিনি চার সন্তানের বাবা। ‘আমরা জন্মেছি কষ্ট ভোগ করার জন্য। আমাদের লড়াইয়ের শেষ নেই। কতবার নদী আমার ঘর কেড়ে নিয়েছে, তার হিসাবও নেই,’ বলেন তিনি।

নুরুন্নবীর গন্তব্য এখন আরেকটি চর। তার ধান ও মসুর ডালের ক্ষেত এরই মধ্যে ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘নতুন জায়গায় কী অপেক্ষা করছে, জানি না। ভাগ্য ভালো হলে হয়তো কয়েক বছর টিকবো, না হলে হয়তো এক মাস। এটাই আমাদের জীবন।’

এক রাতেই হারিয়ে যায় জমি

উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রামে প্রতি বছর শত শত পরিবার একই পরিণতির শিকার হয়। নদীর তীর ভেঙে তারা হারায় ঘরবাড়ি, জমি, ফসল ও গবাদি পশু। একসময় যে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলা নদী জীবনধারণের জন্য আশীর্বাদ ছিল, এখন সেগুলোই হয়ে উঠেছে ভয়াবহ ভাঙনের প্রতীক।

দেশের উত্তর প্রান্তের বালুময়, অনিরাপদ চরগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। মানুষ ঘর বানায়, আবার নদী এসে সব কেড়ে নেয়।

৭০ বছর বয়সী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘নদী কখন আসে বোঝাই যায় না। রাতে ঘুমাতে যান, সকালে দেখবেন তীর বদলে গেছে। ঘরবাড়ি চলে গেছে। আমাদের জীবনে শান্তি নেই।’

আজ বিশ্ব যখন ব্রাজিলে আয়োজিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন ‘কপ-৩০’-এর দিকে তাকিয়ে, তখন বাংলাদেশের এই বাস্তবতা বিশ্বনেতাদের জন্য এক কঠিন বার্তা। দেশটি টেকসই অভিযোজনের দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রশংসিত হলেও পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক সহায়তা ও জলবায়ু তহবিল ছাড়া সেই প্রচেষ্টা যথেষ্ট হবে না।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, ‘এখানকার মানুষ এমন এক দায় মেটাচ্ছে, যা তাদের সৃষ্টি নয়। কপ-৩০ সত্যিকার অর্থে ফলপ্রসূ হতে হলে, ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণের জন্য প্রকৃত অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে এবং আমাদের মতো দুর্বল দেশগুলোকে জীবন ও ভূমি রক্ষায় সাহায্য করতে হবে, সেটিও খুব দেরি হওয়ার আগেই।’

দৃশ্যমান জলবায়ু পরিবর্তন

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কুড়িগ্রামের এই ভাঙন জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান রূপ। হিমালয়ের হিমবাহ দ্রুত গলছে, নব্বইয়ের দশকের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হারে। ফলে নদীগুলোতে বাড়তি পানি যোগ হচ্ছে।

আইনুন নিশাত বলেন, ‘বর্ষার ছন্দ বদলে গেছে। বৃষ্টি হয় হঠাৎ, অত্যধিক এবং দীর্ঘসময় ধরে। কখনো আবার খরার দাপট। এই অস্থিরতা ভাঙন ও বন্যাকে আরও ভয়াবহ করছে।’

বাংলাদেশ বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের অর্ধ শতাংশেরও কম দায় বহন করলেও, জলবায়ু বিপর্যয়ের সবচেয়ে ভয়ানক পরিণতি ভোগ করছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি সাতজন বাংলাদেশির একজন জলবায়ুজনিত দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত হতে পারে।

পঞ্চাশ বছর বয়সী কোসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার জীবনে নদী আমার ঘর অন্তত ৩০–৩৫ বার কেড়ে নিয়েছে, হয়তো তারও বেশি। প্রতিবার ঘর বানাই, নদী এসে আবার কেড়ে নেয়। কিন্তু যাবো কোথায়? এখন তো চারদিকেই পানি।’

নদীভাঙনে নারীদের কষ্টই বেশি। ৩০ বছর বয়সী শাহিনা বেগম গত বছরের বন্যায় কোমরসমান পানিতে দাঁড়িয়ে রান্না করার কথা এখনো স্মরণ করেন। ‘১০ বছরে আমরা ছয়বার জায়গা বদলেছি। প্রতিবার নতুন করে শুরু করি, আবার নদী নিয়ে যায়,’ বলেন তিনি।

তার কথায়, ‘নারী আর কিশোরীদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন। শুকনো জমি খুঁজতে হয়, রান্না করতে হয়, বাচ্চা সামলাতে হয়—কোনো গোপনীয়তা বা নিরাপত্তা নেই।’

বেঁচে থাকার লড়াই

কুড়িগ্রামের খেয়ার আলগা চরে প্রায় ৩০০ পরিবার তিন বছর ধরে টিকে আছে স্থানীয় সংস্থাগুলোর উদ্যোগে বসানো ‘জিওব্যাগ’ (বালু ভরা বিশাল ব্যাগ) দিয়ে তৈরি নদী প্রতিরোধব্যবস্থার কারণে।

৩৯ বছর বয়সী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘এই জিওব্যাগ আমাদের অনেক বাঁচিয়েছে। গত তিন বছরে নদী আমাদের জমি নেয়নি। জীবনে প্রথমবার একটু আশার আলো দেখছি।’

স্থানীয় সংগঠনগুলো উঁচু ঘর ও টিলা-গ্রামের মতো স্থাপনা তৈরি করছে, যা মৌসুমি বন্যার পানিতে টিকে থাকতে পারে।

নদীর তীরে দাঁড়িয়ে জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘নদী হয়তো আবার আসবে একদিন। কিন্তু এবার আমরা প্রস্তুত। আপাতত, মাটি টিকে আছে, টিকে আছি আমরাও।’

আমার বার্তা/জেএইচ

সর্বোচ্চটুকু দিয়ে সরকার অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবে: রিজওয়ানা হাসান

নির্বাচন সামনে রেখে পতিত সরকার বা কোনো অশুভ শক্তি অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে সরকার সর্বোচ্চটুকু

আনিস আলমগীরকে আজকের কাগজের প্রোডাক্ট আখ্যাসহ ধুয়ে দিলেন প্রেস সচিব

স্বঘোষিত ‘স্পষ্টভাষী’ সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে ‘আজকের কাগজের প্রোডাক্ট’ আখ্যা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস

একনেকে ৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকার ১২ প্রকল্প অনুমোদন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৭ হাজার ১৫০ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত

সেবাগ্রহীতাদের সাথে দুর্ব্যবহার করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ভূমি উপদেষ্টা

ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন হয়। সেবাগ্রহীতাদের সাথে মানবিক
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পার্লামেন্ট না হলে জনগণের অধিকার ফিরে আসবে না: মির্জা ফখরুল

সর্বোচ্চটুকু দিয়ে সরকার অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবে: রিজওয়ানা হাসান

সরাইলে নবাগত ইউএনও আবুবকর সরকার যোগদান

আসিফের মারামারি মন্তব্যে অসন্তোষ বাফুফের, বিসিবিকে চিঠি দেবে

বাংলাদেশ-ভারত ফুটবল ম্যাচের টিকিট ৬ মিনিটেই শেষ

যমুনা অয়েলের ডিজিএম হেলাল উদ্দিনের শত কোটি টাকার সম্পদ

আনিস আলমগীরকে আজকের কাগজের প্রোডাক্ট আখ্যাসহ ধুয়ে দিলেন প্রেস সচিব

একনেকে ৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকার ১২ প্রকল্প অনুমোদন

ঢাবি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিশেষ সার্টিফিকেট কোর্স

ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার আগে সতর্ক থাকুন

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইউজিসির বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ

রাজধানীর সূত্রাপুরে গুলিতে নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন: পুলিশ

সেবাগ্রহীতাদের সাথে দুর্ব্যবহার করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ভূমি উপদেষ্টা

নদীভাঙনের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তহীন লড়াই: রয়টার্সের প্রতিবেদন

একাত্তরের চেতনা ভুলিয়ে দিতে একটি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত: ফখরুল

আকুর দায় শোধের পর রিজার্ভ কমে যেখানে দাঁড়ালো

লাইসেন্স পেল সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশন জিহাদ ঘোষণা করেছে: ইসি আনোয়ারুল

মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার ফরমপূরণের সময় বেড়েছে

দিনদুপুরে ন্যাশনাল মেডিকেলের সামনে গুলিতে ব্যবসায়ীর মৃত্যু