শয়তানের সঙ্গে মানুষের শত্রুতার সূচনা সৃষ্টির শুরু থেকে। আল্লাহ তায়ালা যখন মানুষ অর্থাৎ আদিপিতা হজরত আদম আ.-কে সৃষ্টি করলেন তখন আল্লাহর ইবাদত এবং তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলার মতো দুইটি সৃষ্টি ছিল পৃথিবীতে। একটি হলো জীন জাতি, অপরটি হলো ফেরেশতা।
আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতা ও শয়তানেক আদম আ.-কে সিজদা করার নির্দেশ দিলেন। ফেরেশতারা বিনা বাক্য ব্যয়ে আল্লাহর নির্দেশমতো আদম আ.-কে সিজদা করলেও শয়তান অস্বীকৃতি জানালো। সে ফেরেশতাদের সঙ্গে বসবাস করলেও এই ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম অমান্য করলো একাই।
আল্লাহ তায়ালা তার অবাধ্যতার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে অহংকার করে বললো, মানুষ মাটির সৃষ্টি আর আমি আগুনের সৃষ্টি। তাই মাটি সিজদা করতে পারবো না।
হুকুম অমান্য করার কারণে আল্লাহ তায়ালা তাকে অভিশপ্তদের তালিকাভুক্ত করলেন। পুরো ঘটনাটি পবিত্র কোরআনের সূরা আরাফে বর্ণিত হয়েছে এভাবে—
وَلَقَدۡ خَلَقۡنٰکُمۡ ثُمَّ صَوَّرۡنٰکُمۡ ثُمَّ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ ٭ۖ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ لَمۡ یَکُنۡ مِّنَ السّٰجِدِیۡنَ ١١ قَالَ مَا مَنَعَکَ اَلَّا تَسۡجُدَ اِذۡ اَمَرۡتُکَ ؕ قَالَ اَنَا خَیۡرٌ مِّنۡہُ ۚ خَلَقۡتَنِیۡ مِنۡ نَّارٍ وَّخَلَقۡتَہٗ مِنۡ طِیۡنٍ ١٢ قَالَ فَاہۡبِطۡ مِنۡہَا فَمَا یَکُوۡنُ لَکَ اَنۡ تَتَکَبَّرَ فِیۡہَا فَاخۡرُجۡ اِنَّکَ مِنَ الصّٰغِرِیۡنَ ١٣ قَالَ اَنۡظِرۡنِیۡۤ اِلٰی یَوۡمِ یُبۡعَثُوۡنَ ١٤ قَالَ اِنَّکَ مِنَ الۡمُنۡظَرِیۡنَ ١٥ قَالَ فَبِمَاۤ اَغۡوَیۡتَنِیۡ لَاَقۡعُدَنَّ لَہُمۡ صِرَاطَکَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ ۙ ١٦ ثُمَّ لَاٰتِیَنَّہُمۡ مِّنۡۢ بَیۡنِ اَیۡدِیۡہِمۡ وَمِنۡ خَلۡفِہِمۡ وَعَنۡ اَیۡمَانِہِمۡ وَعَنۡ شَمَآئِلِہِمۡ ؕ وَلَا تَجِدُ اَکۡثَرَہُمۡ شٰکِرِیۡنَ ١٧ قَالَ اخۡرُجۡ مِنۡہَا مَذۡءُوۡمًا مَّدۡحُوۡرًا ؕ لَمَنۡ تَبِعَکَ مِنۡہُمۡ لَاَمۡلَـَٔنَّ جَہَنَّمَ مِنۡکُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ ١٨
এবং আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, তারপর তোমাদের আকৃতি গঠন করেছি, তারপর ফিরিশতাদেরকে বলেছি, আদমকে সিজদা কর। সুতরাং সকলে সিজদা করল, ইবলীস ছাড়া। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হল না।
আল্লাহ বললেন, আমি যখন তোকে আদেশ করলাম তখন কিসে তোকে সিজদা করা হতে বিরত রাখল? সে বলল, আমি তার চেয়ে উত্তম। তুমি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছ, আর তাকে সৃষ্টি করেছ মাটি দ্বারা।
আল্লাহ বললেন, তাহলে তুই এখান থেকে নেমে যা। কেননা তোর এই অধিকার নেই যে, এখানে (থেকে) অহংকার করবি। সুতরাং বের হয়ে যা। তুই হীনদের অন্তর্ভুক্ত।
সে বলল, যে দিন মানুষকে (কবর থেকে) জীবিত করে তোলা হবে, সেই দিন পর্যন্ত আমাকে (জীবিত থাকার) সুযোগ দাও।আল্লাহ বললেন, তোকে সুযোগ দেওয়া হল।
সে বলল, তুমি যেহেতু আমাকে পথভ্রষ্ট করেছ, তাই আমিও শপথ করছি যে, আমি তাদের (অর্থাৎ মানুষের) জন্য তোমার সরল পথে ওঁৎ পেতে বসে থাকব।
তারপর আমি (চারও দিক থেকে) তাদের উপর হামলা করব, তাদের সম্মুখ থেকে, তাদের পিছন থেকে, তাদের ডান দিক থেকে এবং তাদের বাম দিক থেকেও। আর তুমি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবে না।
আল্লাহ বললেন, এখান থেকে ধিকৃত ও বিতাড়িত হয়ে বের হয়ে যা। তাদের মধ্যে যারা তোর পিছনে চলবে (তারাও তোর সঙ্গী হবে), আমি তোদের সকলকে দিয়ে জাহান্নাম ভরব। (সূরা আরাফ, আয়াত : ১১-১৮)
আমার বার্তা/এমই