মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনীর প্রধান কমান্ডার সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং, সাবেক প্রেসিডেন্ট তিন কিয়াও ও গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চিসহ মোট ২৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আর্জেন্টিনার একটি আদালত।
২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। খবর আল জাজিরার।
মিয়ানমারের বর্তমান জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং, সাবেক প্রেসিডেন্ট তিন কিয়াও ও গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি ছাড়া আরও ২২ সামরিক কর্মকর্তার নাম পরোয়ানার তালিকায় রাখা করা হয়েছে। ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিন অং হ্লাইং মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নেতৃত্বে রয়েছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, নিজ দেশে রোহিঙ্গারা বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়ে আসছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যভিত্তিক এই জনগোষ্ঠীর ওপর ২০১৭ সালে গণহত্যা চালায় দেশটির কুখ্যাত সেনাবাহিনী। জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গা।
ওই সময় মিয়ানমারে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের প্রধান ছিলেন অং সান সু চি। ২০২১ সালের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। রোহিঙ্গা গণহত্যাকালে সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন মিন অং হ্লাইং। রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন ও যৌন সহিংসতা চালানোর অভিযোগ তোলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি গোষ্ঠী আর্জেন্টিনার আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মিন অং হ্লাইংসহ মিয়ানমারের ২৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বুয়েন্স আয়ার্স আদালত।
এদিকে, আর্জেন্টিনার আদালতের এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে মিয়ানমার জান্তা।
বাহিনীর মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেছেন, ‘আর্জেন্টিনা কি মিয়ানমারকে চেনে? মিয়ানমার সরকার আর্জেন্টিনাকে চেনে। আমরা আর্জেন্টিনাকে পরামর্শ দিতে চাই যে তারা যদি আইন অনুসারে মিয়ানমারের সমালোচনা করতে চায়, তবে প্রথমে তাদের অভ্যন্তরীণ বিচার বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় ও শূন্য বিচারক পদগুলো নিয়োগ করতে হবে।’
এদিকে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে জান্তা প্রধানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও (আইসিসি) একটি আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে এই আবেদন জানান সংস্থাটির প্রসিকিউটর করিম খান। ওই সময় তিনি জানান, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী এই নেতা রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত।
আইসিসির প্রসিকিউটর কার্যালয় জানায়, ২০১৬-১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার সময় সংঘটিত অপরাধ তদন্তে পাঁচ বছর ধরে কাজ চলছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী, জাতীয় পুলিশ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং কিছু স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহযোগিতায় এই মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে।
আমার বার্তা/এমই