শুল্ক চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতি আসার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেছেন, আমার মনে হয় একটি যৌথ বিবৃতি হয়তো শিগগির আসবে। চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর তথ্য অধিকারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি সাপেক্ষে এটি (গোপনীয়তার চুক্তি) আমরা প্রকাশ করবো।
তিনি বলেন, একটি বিষয় খুব দুঃখজনক যে- চুক্তির বিষয়টি কিছুটা প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল। সেখানে দেশের স্বার্থবিরোধী আসলে কিছু নেই। যেগুলো দেশের স্বার্থবিরোধী সেগুলো আমরা আলোচনার মাধ্যমে বের হয়ে এসেছি।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেস মিটের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এটার সাফল্য ব্যর্থতা নির্ভর করবে আমাদের বাণিজ্যিক সক্ষমতার ওপরে। এতে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই।
শুল্ক আলোচনায় সমঝোতা করতে গিয়ে বাংলাদেশ একটি গোপনীয়তার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের স্বার্থ পরিপন্থি কোনও কাজ করছে কিনা এ ব্যাপারে তিনি বলেন, গোপনীয়তার চুক্তি আন্তর্জাতিক দিক দিয়েও নির্দিষ্ট। এমনকি স্থানীয়ভাবে দুটি ব্যবসায়িক সংগঠন বা ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান যখন কোনও চুক্তিতে উপনীত হয় সেখানেও এনডিএ (নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট) খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। দুজন যদি কোনও সম্পদ হস্তান্তরও করে তখন নিজেদের মধ্যে এক ধরনের আলোচনা থাকে এর গোপনীয়তা রক্ষার।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত চুক্তি সম্পন্ন না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এটি করা হয়ে থাকে। কেননা, তার মনে হতে পারে- আমার প্রতিবেশী এই চুক্তিতে সমস্যা করতে পারে বা অন্য কেউ এসে এখানে দাবি করতে পারে। মূলত যুক্তরাষ্ট্র যে বিনিময় চুক্তিটি করছে সেখানে তারা তাদের জাতীয় নিরাপত্তাকে ব্যবহার করেছে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেখানে তাদের চুক্তির মূল নিয়ামক হিসেবে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তাকে বেছে নিয়েছে সেখানে আলোচনার গোপনীয়তার শর্ত থাকা অবশ্যম্ভাবী। এর মাধ্যমে দেশের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করার কোনও উপাদান থাকলে আমরা সে চুক্তিতে উপনীত হবো না। কারণ, আমরা দেশের স্বার্থে স্বার্থবান। আমাদের নিজস্ব স্বার্থ বিসর্জন দেওয়ার তো কোনও সুযোগই নেই। নিজস্ব স্বার্থ জলাঞ্জলি দিলে আমাদের সক্ষমতার ঘাটতি ঘটবে। তাতে আমাদের বাণিজ্য চুক্তি করেও কোনও লাভ হবে না। স্বল্পমেয়াদে বা দীর্ঘ মেয়াদে যদি আমাদের বাণিজ্য সক্ষমতা যদি হ্রাস পায় কিংবা আমাদের ক্ষুদ্র অর্থনীতির কোনোরকম ক্ষতি হয় তবে সেই চুক্তি কোনোভাবেই পালনযোগ্য না।
এই চুক্তি সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার গোপনীয়তার বিষয়টি প্রকাশ করে দেওয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে বলবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর আমার মনে হয় একটি যৌথ বিবৃতি হয়তো শিগগির আসবে। চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর তথ্য অধিকারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি সাপেক্ষে এটি আমরা প্রকাশ করবো। আর একটি বিষয় খুব দুঃখজনক যে, চুক্তির বিষয়টি কিছুটা প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল। সেখানে দেশের স্বার্থবিরোধী আসলে কিছু নেই।
উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। নতুন এই শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। ৯০ দিনের ওই শুল্ক বিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের ওপর নতুন করে শুল্ক হার নির্ধারণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সামান্য কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানসহ ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক হার নির্ধারণ করা হয়। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ৯ জুলাই থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ১ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত বাড়তি ৩৫ শতাংশ শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক শুল্ক চু্ক্তির চেষ্টা করে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। শুল্ক কমিয়ে চুক্তিটি চূড়ান্ত করতে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের (ইউএসটিআর) সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে বসে বাংলাদেশ। পাল্টা শুল্ক চুক্তি নিয়ে তৃতীয় ও চূড়ান্ত দফার আলোচনার জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয় (ইউএসটিআর)।
মঙ্গল ও বুধবার ওয়াশিংটনে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল।
এরই মধ্যে বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৩৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর দর-কষাকষিতে সুবিধা পেতে দেশটি থেকে ২৫টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার অর্ডার দেয় বাংলাদেশ। এর আগে কিছুটা বাড়তি দামে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি।
আমার বার্তা/এমই