২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জমা দিয়েছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকীসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) শহীদ পরিবারের পক্ষে অ্যাডভোকেট উদয় তাসমীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এসময় তৎকালীন বিডিআরের ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে ব্যারিস্টার রাকিন আহমেদ, শহীদ কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী ফেরদৌসী, কর্নেল কুদরত এলাহীর ছেলে সাকিব রহমানসহ ১৫-২০ জন শহীদ পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত রোববার বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে কমিশন গঠন করা হচ্ছে না জানায় সরকার। এই বিষয়ে ২টি মামলা বিচারাধীন থাকায় আপাতত কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার যুক্তি দিয়ে হাইকোর্টকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল। বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং তদন্ত কমিশন গঠনে অন্তর্বর্তী সরকার গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তদন্ত কমিশন গঠনে মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহিন সরকার। এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
আন্দোলনের মুখে ওইদিনই পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এবার বৃহস্পতিবার হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে অভিযোগ দায়ের হল।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার পরপরই পিলখানা বিডিআর সদর দফতরে গুলির শব্দ পাওয়া যেতে থাকে। বিডিআর সপ্তাহ চলার কারণে প্রথমে অনেকেই ভাবছিলেন, কোনও কর্মসূচি চলছে। কিন্তু কিছু সময় পর জানা যায় বিদ্রোহ হয়েছে। পিলখানার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জওয়ানরা।
বিদ্রোহের পর সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এরইমধ্যে পিলখানার চারদিকে সেনাবাহিনী ভারী অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়।
একপর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্রোহীদের সঙ্গে শুরু হয় আলোচনা। তৎকালীন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, হুইপ মির্জা আজম ও সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস এ আলোচনায় নেতৃত্ব দেন।
ওইদিন বিকালে শেখ হাসিনার সঙ্গেও বিদ্রোহীদের আলোচনা হয়। পরে পিলখানার প্রধান ফটকের পাশের একটি রেস্তোরাঁয় আলোচনায় অংশ নেন তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীসহ আওয়ামী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন।
গভীর রাতে তখনকার তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন পিলখানায় গেলে বিদ্রোহীরা তার কাছে অস্ত্রসমর্পণ করেন। সাহারা খাতুন বেরিয়ে আসার সময় বিদ্রোহীদের হাতে জিম্মি কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন।
কিন্তু এরপরও পিলখানা বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকতে দেখা যায়। একপর্যায়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকাল থেকে পিলখানা শূন্য হয়ে পড়লে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পিলখানার নিয়ন্ত্রণ নেয়। প্রায় ৩৩ ঘণ্টার এমন রুদ্ধদ্বার ঘটনায় পুরো জাতি হতভম্ব হয়ে যায়।
বিদ্রোহ অবসানের পরদিন পিলখানায় পাওয়া যায় একাধিক গণকবর। সেখানে পাওয়া যায় বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, তার স্ত্রীসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তাদের লাশ। আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের ৫০ দিনের মধ্যে দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে এতো বড় হত্যাকাণ্ড পুরো জাতির জীবনে বেদনাময় এব কালো অধ্যায়।
রক্তাক্ত ওই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুনর্গঠন করা হয়। নাম বদলের পর এ বাহিনী এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হিসেবে পরিচিত।
আমার বার্তা/এমই