বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বহু মানুষের আত্মদানে আজকের এই স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের মালিক জনগণ, জনগণই বিএনপির শক্তির একমাত্র উৎস।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান অভিযোগ করে বলেন, বিগত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর জবাবদিহি নষ্ট করেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে ব্যবহার করে গুম-খুনের রাজনীতি চালিয়েছে। লাখ লাখ গায়েবি মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের আদালতের বারান্দায় ঘুরিয়েছে। দেশে তিন কোটি নতুন ভোটার ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। ফলে ভোটব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শিশু, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে রাস্তায় গুলি করে হত্যা করেছে। দেশের অর্থনীতি, শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্য খাত, কৃষি ও কর্মসংস্থান—সব ক্ষেত্র ধ্বংস করেছে। মেগাপ্রকল্পের নামে মেগাদুর্নীতি হয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, আমরা প্রত্যেকে ভিন্ন রাজনৈতিক দল।
তাই মতের ভিন্নতা থাকবেই। কিন্তু এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। আজকের সম্মেলনে যেমন প্রার্থীরা কাউন্সিলরদের কাছে গিয়েছেন, তাদের মতামত নিয়েছেন, সেই মতামতের ভিত্তিতেই নতুন নেতৃত্ব গঠিত হয়েছে—এটাই গণতন্ত্র। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের চিন্তা, নীতি ও কর্মপরিকল্পনা জনগণের সামনে উপস্থাপন করবে। জনগণই বেছে নেবে কার হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব যাবে। জনগণ শুধু বেছে নেবে না, জনগণই চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নেবে কে আগামী দিনে দেশ পরিচালনা করবে।
তারেক রহমান সতর্ক করে বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনার টেবিলে বসে জনগণকে বাদ দিয়ে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে চায়, তবে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হবে। এটি দেশের জন্য কাঙ্ক্ষিত নয়। বরং এতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার আবার ফিরে আসার সুযোগ পাবে।
তিনি আরো বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত রিফর্ম কমিটিতে প্রায় সব গণতান্ত্রিক দল অংশ নিয়েছে। কিছু বিষয়ে সেখানে সবার মধ্যে একমত হয়েছে, আবার কিছু বিষয়ে ভিন্নতা রয়েছে। গণতন্ত্রে মতভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক। যেখানে ভিন্নতা রয়েছে, সেটি জনগণের ওপর ছেড়ে দিন। জনগণের ওপর আস্থা রাখুন, জনগণের সামনে আপনার নীতি-আদর্শ তুলে ধরুন। জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না। দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থানসহ সব খাতের সংস্কারের মাধ্যমে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিএনপি বদ্ধপরিকর।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন যতটা সহজ মনে হচ্ছে, ততটা সহজ না-ও হতে পারে। দিন যত যাচ্ছে, সেই আশঙ্কা সত্যি হচ্ছে। তাই নেতাকর্মীদের সতর্ক থেকে শপথ নিতে হবে।
এর আগে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এবং রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু।
দীর্ঘ সাত বছর আট মাস পর আয়োজিত এ সম্মেলন ঘিরে সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল ঠাকুরগাঁওয়ে। জেলার পাঁচ উপজেলা ও তিন পৌরসভার মোট ৮০৮ জন কাউন্সিলর ভোট দিয়ে জেলা নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।
আমার বার্তা/এমই