ছিলেন সামান্য একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। এরপর হয়েছেন হাজার কোটি টাকার মালিক। গত ১৫ বছরে রকেট গতিতে ঘুরিয়েছেন নিজের ভাগ্যের চাকা। এই সময়টিতে তাঁর সম্পদ বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবেই। গড়েছেন হাউজিং কোম্পানি, টেক্সটাইল ও সিরামিকসহ ৩০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান। আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ পাচার করেছেন বিদেশেও। এমনকি পর্তুগাল ও দুবাইয়েও রয়েছে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। দুবাইয়ে বিনিয়োগ দেখিয়ে নিয়েছেন গোল্ডেন ভিসা। তবে এবার আর সম্ভবত শেষরক্ষা হচ্ছে না। বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে ফেঁসে যাচ্ছেন দেশের আলোচিত-সমালোচিত ব্যবসায়ী কুতুবউদ্দিন আহমেদ। যিনি বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি এবং এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেড ও শেলটেক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা।
সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে এ সিদ্ধান্তে নড়েচড়ে বসেছেন এই রহস্যময় ধনকুবের এমন গুঞ্জণ-গুঞ্জরণও চলছে। তবে গত সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুদকের দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল থেকে পরিচালক ইশিতা রনির স্বাক্ষর করা একটি চিঠিতে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তদন্ত-১ শাখার মহাপরিচালককে বলা হয়েছে।
জানা যায়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিদেশে অর্থপাচারে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে একটি ‘হিটলিস্ট’ তৈরি করা হয়েছে। এমন সময়েই বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি কুতুবউদ্দিন আহমেদকে নিয়েও শুরু হয় বিতর্ক। এ বিতর্কে নতুন মাত্রা পায় তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দায়ের করা একটি অভিযোগকে ঘিরে। এই অভিযোগে বলা হয়, আবাসন খাতে তাঁর অপ্রদর্শিত অর্থ বিদেশে পাচারের বিষয়টি। দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর এনভয় টেক্সটাইলের শেয়ার হোল্ডার এম এ কুদ্দুসের এই অভিযোগটিকে ঘিরে জনমনে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক কর্মকর্তা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক কুতুবউদ্দিনের গত ১৫ বছরে সম্পদ বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। তিনি গড়ে তুলেছেন হাউজিং কোম্পানি, টেক্সটাইল ও সিরামিকসহ ৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান। কুতুবউদ্দিনের প্রতিষ্ঠান হাউজিং কোম্পানি শেলটেকের মাধ্যমে পুলিশ, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা, এনবিআরসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা এবং অসৎ ব্যবসায়ীদের কালো টাকা সাদা করে থাকেন। কালো টাকার মালিকদের কাছেও নির্ভয়ের নাম শেলটেক। মানুষের অবৈধ অর্থ বিনিয়োগের জন্য শেলটেকের কর্মীদের কুতুবউদ্দিন নানা টেকনিক শিখিয়েছেন। ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান, বারিধারা, বনানীতে জমি, ফ্ল্যাট বা ফ্লোর স্পেসের মূল্য আকাশছোঁয়া হলেও এসব এলাকায় বহুতল ভবনে স্পেস বিক্রি বা হস্তান্তর দলিলে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে অনেক কম মূল্য দেখিয়ে থাকে কুতুবউদ্দিনের শেলটেক। ফ্ল্যাট নির্মাণে প্রতি বর্গফুটে যে খরচ হয়, ডেভেলপার কোম্পানি শেলটেক ও ক্রেতা যোগসাজশ করে তার চেয়েও কম দাম দেখাচ্ছে। ক্রেতা ক্রয়কৃত ফ্ল্যাট বা স্পেসের বিনিয়োগ মূল্য আয়কর নথিতে প্রদর্শন করতে হয় না। করলেও প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক কমে নামমাত্র মূল্য প্রদর্শন করার নানা টেকনিক দেখিয়ে দেন কুতুবউদ্দিন এবং তার লিগ্যাল ডিপার্টমেন্ট।
অভিযোগে বলা হয়েছে, গুলশানে দক্ষিণমুখী লেকের পাড়ে অবস্থিত একটি বহুতল ভবনে ঢাকার একটি চক্ষু হাসপাতালের একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফ্ল্যাট কেনেন। ডাক্তারি পেশা থেকে অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ করার জন্য ৪ হাজার ৩৭৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ১৩ কোটি টাকায় কিনলেও সাড়ে ৪ কোটি টাকা মূল্যে রেজিস্ট্রেশন নেন। বাকি সাড়ে ৮ কোটি টাকার সম্পদ খুব সহজেই বৈধ করে নিয়েছেন তিনি। আর শেলটেকের মালিক এসব অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। অবৈধ অর্থ বৈধ করতে কুতুবউদ্দিন হুন্ডি চক্র তৈরি করেছেন কুতুবউদ্দিন।
আমার বার্তা/এমই