রাশিয়া-বেলারুশের যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে ভারতীয় সেনারাও। গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস এ খবর নিশ্চিত করে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়ার নেতৃত্বে গত শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) ‘জাপাদ-২০২৫’ নামে পাঁচ দিনের সামরিক মহড়া শুরু হয়।
ভারতের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্কারোপের জেরে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান তিক্ততার মধ্যে রুশ সামরিক মহড়া অংশগ্রহণ নয়াদিল্লি-মস্কোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টি সামনে এনেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়ার নেতৃত্বে গত শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) ‘জাপাদ-২০২৫’ নামে পাঁচ দিনের সামরিক মহড়া শুরু হয়। আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, জাপাদ-২০২৫ সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে ৬৫ সেনা পাঠিয়েছে তারা।
এই মহড়ায় রাশিয়া ও বেলারুশ যৌথ সামরিক মহড়ার অংশ হিসেবে রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের উৎক্ষেপণের অনুশীলন করে, যার মধ্যে ওরেশনিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রও ছিল যা মস্কো গত বছর ইউক্রেন যুদ্ধে পরীক্ষা করেছিল।
মঙ্গলবার ছিল সামরিক মহড়ার শেষ দিন। এদিন সামরিক পোশাক পরে মহড়া পরিদর্শন করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আজ আমরা জাপাদ-২০২৫ কৌশলগত মহড়ার চূড়ান্ত ধাপ পরিচালনা করছি।’
রাশিয়ার সামরিক মহড়ায় অংশ নেয়া ভারতের জন্য নতুন নয়। ২০২১ সালে অর্থাৎ ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর কিছুদিন আগে নয়াদিল্লি জানায়, তারা রাশিয়ার ভলগোগ্রাদ অঞ্চলে ‘সন্ত্রাসবিরোধী ও প্রচলিত অভিযান’ সম্পৃক্ত সামরিক মহড়ায় সেনা পাঠিয়েছে। তবে তারা সেনা সংখ্যা উল্লেখ করেনি।
তবে এবারের সামরিক মহড়া এমন সময় চালানো হলো, যখন ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়া থেকে তেল কেনায় অব্যাহত রাখায় ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক তলানিতে এবং ইউরোপ মস্কোকে ক্রমবর্ধমান ‘নিরাপত্তা হুমকি’ হিসেবে দেখছে। পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকরা এরই মধ্যে বলেছেন যে, রাশিয়ার নেতৃত্বে বহুজাতিক এই সামরিক মহড়া মূলত ইউরোপকে ভয় দেখানোর জন্য চালানো হয়েছে।
ক্রেমলিনের বরাত দিয়ে তাস বলেছে, ইরান, বাংলাদেশ, বুরকিনা ফাসো, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো ও মালির ‘টাস্কফোর্স এবং সামরিক দল’ এ মহড়ায় অংশ নেয়। কিন্তু ভারতীয় সেনাদের অংশগ্রহণ অবশ্যই বিশেষ। ভারতের সেনাবাহিনীর অভিজাত পদাতিক বাহিনী কুমায়ুন রেজিমেন্ট মহড়ায় অংশ নেয়া ভারতীয় দলটির নেতৃত্ব দেয়।
ভারতীয় সেনাদের মহড়ায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির ‘সহযোগিতা ও পারস্পরিক বিশ্বাসের মনোভাব জোরদার করা’। যা অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের একটি ভারত, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে।
কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত মাস থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, এ শুল্কের মধ্যে ২৫ শতাংশ ভারতের ওপর ‘জরিমানা’ হিসেবে আরোপ করা হয়েছে। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার কারণে ভারতকে এ শাস্তি দেয়া হয়েছে।
আমার বার্তা/এল/এমই