কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রাম। কয়েক বছর আগেও এখানকার মানুষের প্রধান পেশা ছিল কৃষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসা। তবে সময়ের পরিক্রমায় বদলে গেছে এই গ্রামের আর্থসামাজিক চিত্র। শতাধিক পরিবার এখন অনলাইন জুয়া ও ক্যাসিনোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাতারাতি বড়লোক বনে গেছে। আবার অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই জুয়ার নেপথ্যে রয়েছে দেশের বাইরে পরিচালিত কয়েকটি চক্র। বিশেষ করে দুবাইপ্রবাসী এক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে এসব অনলাইন জুয়া সিন্ডিকেটের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে। তার তত্ত্বাবধানে এলাকার বেশ কয়েকজন এজেন্ট স্থানীয় যুবকদের এই জুয়ার ফাঁদে ফেলছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, একসময় প্রবাসী বা সাধারণ চাকরিজীবী থাকা অনেকেই এখন জুয়ার টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। গজারিয়ার মৃত সিন্দু মিয়ার ছেলে হেকিম মিয়া ও সোহাগ মিয়া দুই বছর আগেও ছিলেন হকার ও স্কুল পিয়ন। কিন্তু এখন তারা কোটি টাকার মালিক। কেউ গড়ে তুলেছেন আধুনিক সেলুন, কেউ বিশাল গবাদি পশুর খামার কিংবা কসমেটিকসের দোকান।
এলাকার আরেকজন মোবাইল মেকানিক থেকে কোটিপতি হয়েছেন, কেউবা জুতার ব্যবসা ছেড়ে এখন অনলাইন জুয়ার সুপার এজেন্ট। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি সরাসরি এসব অনলাইন জুয়ার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন।
জুয়ার টাকা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, গত ডিসেম্বরে তিনি ১৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে সব হারিয়েছেন। শুধু তিনিই নন, আরও অনেকেই এভাবে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।
জুয়া থেকে অর্থ জোগাড় করতে এলাকায় চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। এমনকি কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব জুয়ার আসর চললেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রতিনিধি জানান, কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির ছত্রচ্ছায়ায় এই জুয়ার ব্যবসা চলছে, যার কারণে প্রশাসনও নীরব ভূমিকা পালন করছে।
এ বিষয়ে বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুরাদ হোসেন বলেন, “এ ব্যাপারে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গজারিয়া গ্রামের সাধারণ মানুষ এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা চাইছেন, প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এই অবৈধ জুয়ার চক্র বন্ধ করুক, যেন তাদের ছেলে-মেয়েরা এ ধরনের অপরাধে না জড়িয়ে পড়ে।