ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণীরা কপালে টিপ, ঠোঁটে লিপস্টিক আর চুলের বেনিতে ফুলের মালা দিয়ে নিজেদের সাজিয়েছেন। তাদের সঙ্গে পিছিয়ে নেই তরুণেরাও। রঙিন পোশাক পরে উৎসবমুখর পরিবেশে মাঠজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। কেউ ব্যস্ত আড্ডায়, কেউবা মঞ্চে চলা নাচ-গানের আনন্দে মগ্ন। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নাচ ও গান দর্শকদের মাতিয়ে তুলেছে।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে অনুষ্ঠিত আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী এই মিলন মেলায় এমনই প্রাণবন্ত দৃশ্য দেখা যায়। শারদীয় দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনের পরের দিন বীরগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসে এ মেলা। দিনাজপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মনজুরুল ইসলাম মঞ্জু মেলার উদ্বোধন করেন।
সমতলভূমির আদিবাসীদের এই ঐতিহ্যবাহী মেলায় অংশ নেন বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষ। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় দিনব্যাপী উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এই মিলন মেলা, যা স্থানীয়ভাবে ‘বাসিয়া হাটি’ নামে পরিচিত।
মেলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো—এখানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা পছন্দের জীবনসঙ্গী খোঁজার সুযোগ পান। এ বিষয়ে আয়োজক ও আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক পাথরাস কিসকু বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই মেলার সূচনা করেন। আমরা শুধু সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছি। ঠিক কবে থেকে এ মেলার প্রচলন, তা বলা কঠিন, তবে আনুমানিক দুই শত বছর ধরে এটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যদিও মেলায় সরাসরি বিয়ের আয়োজন হয় না, কেউ কাউকে পছন্দ করলে পরে পারিবারিকভাবে বিবাহ সম্পন্ন করে—এটি মূলত মিলন ও আনন্দের উৎসব।
দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, রাজশাহী ও নওগাঁসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে কয়েক হাজার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের সমাগমে মুখর হয়ে ওঠে গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ।
আমার বার্তা/এল/এমই